ঘরে ও অফিসে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া
মূল : মাওলানা ওহিদুদ্দিন খান
তর্জমা : মওলবি আশরাফ
এক লোক জানালো তাদের বিয়ের পর বেশ কয়েক বছর পার হয়েছে, দুইটা বাচ্চাও আছে, তারপর ঝগড়া হয়, শেষমেশ এই সিদ্ধান্ত হয়: এক বাচ্চা তুমি নাও, আরেক বাচ্চা আমি নিচ্ছি, দুইজন যে যার মতো থাকব। তো এখন আলাদা আলাদা থাকে। দুজনেই বাড়ি লোন নিয়ে গাড়ি লোন নিয়ে আলাদা আলাদা বসবাস করে। তো পুরো কাহিনি শুনে আমি যে ফলাফল বের করেছি সেটা হলো তারা নিজেদের মানিয়ে নিয়ে থাকতে প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু এই দুইজনেই কোম্পানিতে বসের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিয়ে থাকছে।
একটু চিন্তা করে দেখুন, ঘরে নিজেদের মানিয়ে নিয়ে থাকতে না পারার কারণে সেপারেশন তথা আলাদা হয়ে গেল। আর তারাই কিনা বসের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিয়ে থাকছে। বিষয়টা একেবারে সোজাসাপ্টা কথা নয়। তারা সামগ্রিক অর্থে মানিয়ে নেওয়ার ফরমুলা ব্যবহার করেনি; বরং ভণ্ডামির জন্য ব্যবহার করেছে। ব্যাপারটা বুঝে নিন। যদি তারা নিজেদের মানিয়ে নেওয়া জীবনের মূলনীতি হিসাবে গ্রহণ করত, তাহলে ঘরে যেমন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে, তেমনি অফিসে বস ও কলিগদের সাথে নিজেদের অ্যাডাজাস্ট করত। তখন আমি বলতাম তারা মানিয়ে নেওয়াকে সামগ্রিক অর্থে নিয়েছে। কিন্তু ঘরে তারা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেনি কিন্তু কোম্পানিতে করেছে। এটা খুবই ভয়ানক বিষয়। এর মানে আপনি আপনার ব্যক্তিত্বকে খুবই দুর্বল বানিয়ে তুলছেন। আপনার ব্যক্তিত্ব কোনো মূলনীতির ওপর নয়; বরং মোনাফেকির ওপর। একটু ভেবে বলুন, এই-ই কী জীবন? এই কথা এসব লোকেরা, মানে সিঙ্গেল প্যারেন্টরা একদম বোঝে না। এমন লোকজনের সাথে আমার কথা হয়েছে। তারা ভাবতেও পারে না যে ঘরে যদি নিজেদের মানিয়ে নিতে পারত তাহলে মানিয়ে নেওয়ার ফরমুলা সামগ্রিকভাবে কাজে লাগত। এখন যা করছে, তারা ঘরে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারছে না, কিন্তু কোম্পানিতে পারছে, এর মানে তারা আক্ষরিক অর্থে মোনাফেকি করছে। কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতি না হওয়ায় তারা বিষয়টা বুঝতে পারছে না। কত লোককে আমি বলেছি, কিন্তু তারা বুঝে উঠতে পারছে না যে তারা যা করছে সেটা কীভাবে মোনাফেকি হচ্ছে আর কীভাবে সামগ্রিকভাবে ফরমুলার ব্যবহার হচ্ছে না। কী ক্ষতিই-না হচ্ছে এর ফলে। এজন্য আমি এর নাম দিয়েছি বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যতা।