কৃতজ্ঞতা এক রকমের কোরবানি
মূল : মাওলানা ওহিদুদ্দিন খান
তর্জমা : মওলবি আশরাফ
কৃতজ্ঞতা সবচেয়ে বড় ইবাদত। কৃতজ্ঞতা জান্নাতের বিনিময় মূল্য। কৃতজ্ঞতা ছাড়া ঈমানের মূল্য নাই। কৃতজ্ঞতা ছাড়া সত্যিকারের ইবাদত হয় না। কৃতজ্ঞতা ছাড়া মানুষ সেই উচ্চপর্যায়ের মর্যাদা লাভ করতে পারে না, কোরআনে যাকে বলা হয়েছে ‘রব্বানিইয়াত’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৭৯)। আসল কথা হলো কৃতজ্ঞতাই ধর্মকর্ম বা দীনদারির প্রাণ। কৃতজ্ঞতা ছাড়া দীনদারি ফলের ওপরের খোসার মতো।
কিন্তু কৃতজ্ঞতা কেবল মুখ দিয়ে দুটো কথা বলার নাম নয়। কৃতজ্ঞতা এক রকমের কোরবানি। বরং সবচেয়ে বড় রকমের কোরবানি। যেই লোক সবচেয়ে বড় রকমের কোরবানি করার জন্য প্রস্তুত হয়, সে-ই কেবল আল্লাহর উদ্দিষ্ট কৃতজ্ঞ ব্যক্তি হতে পারে।
আসলে বিদ্যমান জগতের সব মানুষের মনেই কোনো না কোনোভাবে এই ধারণা জন্মে যে সে বঞ্চিত। সব মানুষের অন্তরেই কারো না কারো প্রতি নেতিবাচক মনোভাব থাকে। সব মানুষেরই বিভিন্ন জিনিসের ওপর অভিযোগ ও ঘৃণাবোধ নিয়ে বাঁচতে হয়। এইসবের কারণেই কৃতজ্ঞতা খুবই কঠিন এক কাজে পরিণত হয়েছে। মানুষ মুখে কৃতজ্ঞতার কথা বললেও তার অন্তরে সত্যিকারের কৃতজ্ঞতার অনুভূতি একদমই থাকে না।
এই কারণে এমন লোকই শুধু কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারে যার মনন এমনভাবে বিকশিত হয়েছে যে সে অকৃতজ্ঞ হওয়ার হাজারটা কারণ থাকা সত্ত্বেও কৃতজ্ঞ হয়। সে নেতিবাচক চিন্তার জঙ্গলে থেকেও ইতিবাচক চিন্তায় বসবাস করে। সে খুঁজে খুঁজে নিজের ভেতরকার অকৃতজ্ঞ হওয়ার ভাবনাগুলো বের করে দেয়, এবং মনের ভেতরে কৃতজ্ঞ হওয়ার আবেগ জাগিয়ে তুলতে পারে।
কৃতজ্ঞতা এক কিসিমের ইবাদত, যা সর্বাবস্থায় একজন মানুষের কাছে কামনা করা হয়। যেই লোক মনে করে কৃতজ্ঞতা ওইসময় আদায় করা উচিৎ যখন কোনো কাজ তার মর্জিমাফিক হয়, তার চাওয়া জিনিসটি এমনভাবেই পায় যেভাবে সে চেয়েছিল। এরকম লোক কখনোই কৃতজ্ঞ হতে পারে না। প্রকৃত কৃতজ্ঞ সে-ই হয় যে অভিযোগ করার অবস্থানে থেকেও কৃতজ্ঞ হওয়ার অন্তর্নিহিত মর্ম খুঁজে বের করে।