বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে হাত ক্রমশ জমে আসছিলো। গ্রীষ্মের শেষে বসন্তের আমেজে সেজেছে প্রকৃতি। গাছের পাতাগুলোয় এই সময় তিন রকমের রং চোখে পড়ে – সবুজ, হলুদ আর লাল। প্রকৃতির সৌন্দর্যকে হয়তো কখনো কোন সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা যাবে না। সিডনি শহরের স্নিগ্ধতার কোন তুলনাই হয় না। এটা অষ্ট্রেলিয়ার অপেরা হাউজের সিডনি না, কানাডা, নোভা স্কসিয়ার সিডনি। নয়টা প্রদেশের মধ্যে নোভা স্কসিয়া দ্বিতীয় কনিষ্ঠ। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে শুধু সিডনিই না, প্যারিস, লন্ডন, ইর্য়ক সবই আছে এ দেশের ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে।
পাহাড় ঘেরা, আটলান্টিক সমুদ্রের কোল ঘেঁষে অপরূপ সৌন্দর্যের লহর তোলা এই কেপ ব্রেটন দ্বীপকে বলা হয় মৃত্যুর আগে অবশ্যই দর্শনীয় দশটা জায়গার মধ্যে একটা।
বাস এসে গেছে। এক নম্বর বাস। এই বাসে চেপে আমাকে ডরচেস্টার মানে মেইন বাস স্টপ থেকে পাঁচ নম্বর বাসে উঠতে হবে। গন্তব্যস্হল নর্থ সিডনি। ডেভেনপোর্ট রোড আসতেই চোখের দৃষ্টি তাকে না খুঁজলেও মনের অনুরণন যাকে স্মরণ করছে সে-ই চড়ে বসলো বাসে- হারপ্রিত।

আজকে দুপাশে চুলের ছোট বেনি করেছে। মেসেজ করে বললাম,”আমি তোমার পেছনে” ! মেসেজ পড়ে কিছুটা অবাক হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে। আমি হাত নেড়ে ইশারা জানালাম পেছন থেকে। নিজের জায়গা থেকে খানিকটা সরে গিয়ে পাশে বসতে বললো। আজ ধূসর বর্ণের জ্যাকেট পড়েছে আর মাথায় নীল রঙের টুপি। ঠোঁটে ডিপ রেড লিপস্টিক। পায়ে সিলভার কালারের জুতো জোড়া মনে হয় হাডসন বে থেকে কেনা। আমরা ইউনিভার্সিটিতে ক্লাসমেট আর ওয়ালমার্টে কলিগও।
ডরচেস্টার পৌঁছে পাঁচ নম্বর বাসে উঠে বসলাম দু’জনেই। ওর গতরাতের গল্প শুনিয়ে যাচ্ছে আর আমি শ্রোতা। আমাদের গল্প শুরু হয় কিন্তু শেষ হওয়ার আগেই গন্তব্যে পৌঁছে যাই।
ওর বাসে চড়তে ভয় লাগে। বলে, যখন বাস উপর থেকে নিচের দিকে নেমে যায় তখন মাথা বোঁ বোঁ করে ঘুরতে থাকে। এখানকার রাস্তাগুলো কিছু কিছু জায়গায় বেশ ঢালু আবার কিছু জায়গায় সমতল। আমার কেমন লাগে জিজ্ঞেস করাতে বললাম, আমার তো বেশ মজাই লাগে। মনে হয় উড়ছি। কখনো খুব উঁচুতে আবার কখনও নিচের দিকে নেমে যাচ্ছি। দারুণ লাগে!
পৌঁছে যে যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। আমাদের ডিপার্টমেন্ট আলাদা। ও ক্যাশিয়ার আর আমি সেলসফ্লোর এসোসিয়েট।
ওর ডিউটি পড়েছে এগার নাম্বার রেজিস্ট্রারে। ওখানে কাস্টমারের ভিড় সবসময়ই কম থাকে। ওয়ালমার্টে প্রবেশ পথ দুটো – এগার নাম্বার রেজিস্ট্রারের দিকে দুই নম্বর প্রবেশ দ্বার হওয়ায় ওদিকে খুব একটা ভিড় হয় না। ও অধিকাংশ সময়ই ওখানে একা দাঁড়িয়ে বোর হয়ে যায়, তাই আমাকে আশেপাশে দেখলেই ডাকে। আমি টুকটাক কিছু বলেই চলে যাই নিজের কাজে। কখনো সখনো ওর পানির ক্যান, পেপসির বোতল অন্য কোথাও রেখে চলে আসি। আর ও খুঁজতে থাকে হন্যে হয়ে, দূর থেকে তাকিয়ে কান্ড কারখানা দেখি! অবশ্য এমন জায়গায় রাখি যেন কিছুক্ষণ খোঁজার পর পেয়ে যায়। তখন চেহারায় যে ভাবখানা ফুটে উঠে তাতে স্পষ্টত দেখতে পাই আমাকে ওই সময় সামনে পেলে ও কি করতো?
আজ কাজ শেষে ফেরার পথে বাস সময়ের আগেই পৌঁছে গেল। সময় আছে দেখে নামার পরই ওকে বললাম, চলো টিম যাই। টিম হর্টনস। কফি চেইন সুপারশপ। পুরো কানাডা জুড়েই এক নামেই পরিচিত ও দারুণ জনপ্রিয় এ কফিশপ।
রাস্তা পার হওয়ার সময় বাসটা আমাদের অপেক্ষায় রইলো। তো ওটা দেখে যাওয়ার পথে মজা করে ওকে বললাম, “আমি তো ইউনিভার্সিটির ভবিষ্যৎ এ্যামপ্লয়ী। সম্মান করে কথা বলো। দেখো, ড্রাইভারও জানে কাকে সম্মান করতে হবে। এজন্যই আমাদের রাস্তা ছেড়ে দিলো। ”
ও হেসে বললো, “ওটা সবার জন্যই করবে। তোমাকে দেখে অপেক্ষা করতে ওর বয়েই গেছে!”এরপর মুখ ভেংচি কেটে বললো, “দেখ লুংগি! কিতনা পোটেনশিয়ালস হ্যায় আপ মে?” (দেখে নিবো, তোমার কতটা পোটেনশিয়ালস আছে?) আমি ইউনিভার্সিটিতেও জব করি। তাই ইতিমধ্যেই অনেকের চক্ষু শূলে পরিণত হয়েছি। ব্যাপারটা বেশ মজার লাগছে আমার !!
পান্জাবী মেয়ে হলেও ওর বাবার চাকরির সুবাদে ভারতবর্ষের অনেক শহর ঘোরা হয়েছে। ভদ্রলোক পেশায় ছিলেন আর্মি ইঞ্জিনিয়ার। পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাট, রাজস্তান, জম্বু – কাশ্মীর আর ওর বাবার আর্মি ইউনিটে বেশ কিছু পরিবার ছিল তামিল ভাষাভাষী। কাজেই ও নিজেকে ঠিক পান্জাবী বলে পরিচয় দেয় না। আমাদের কথোপকথন হয় হিন্দিতে। আর মাঝে মধ্যে আমি বাংলায় অনেক কিছু বকে ফেলি যা শুনে ও বাংলা-হিন্দি মিশিয়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করে। আর আমি ওকে শুধরে দিই। ইতিমদ্ধে একটা কথা ভালভাবেই রপ্ত করেছে – “উলটোপালটা বকবে না !!” সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে – আমার ভারতীয় বন্ধুগণ মানে সে পাঞ্জাবী হোক বা গুজরাটি বা মালায়ালি হোক – নির্ভুলভাবে বাংলায় একটা কথাই বলতে জানে – ” আমি তোমাকে ভালবাসি!!” এটা বলতে ওদের কোন ভুল হয় না !!
আমরা দশ মিনিটের মাথায় পৌঁছে গেলাম টিম হর্টনস এ। এইটুকু পথ হাঁটতেই দুজনেই ঠাণ্ডায় জমে ক্ষীর। কাজেই এখন গরম কফির অর্ডার দেওয়ার পালা।
টিম হর্টনস, জর্জ স্ট্রিট।

ঢুকেই বাম পাশের টেবিলে চারজনের বসার জায়গা হলেও সাথে থাকা ব্যাগ আর জ্যাকেট পাশের চেয়ারে রেখে যে যার মত বসে পড়লাম। তেমন একটা ভিড়ভাট্টা না থাকায় বসতে কোন অসুবিধাই হল না। বামপাশের সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্টে দুই ধরণের বসার ব্যবস্থা রয়েছে – প্রথমদিকের চারটা টেবিল বাদে বাকিগুলো দুইজনের জন্য। সামনের দিকে এবং ডানদিকের কিছুটা অংশ জুড়ে আছে ফ্যামিলি সিটিং এর ব্যবস্থা। আমরা মূলত প্রবেশপথের বামদিকটায় বসে আছি তার অপর পাশেও বসার ব্যবস্থা রয়েছে। ডানদিকের ওপাশের ওয়াল এলইডিতে কাস্টমারেরা টিভি দেখছে। পুরো সেটিংসটা মূল প্রবেশ ফটকের অপর পাশের ছোট্ট একটা জায়গা জুড়ে। মেইন ডোর হয়ে ঢুকে একটু এগুতেই অর্ডার দেয়ার ফ্রন্ট ডেস্ক। ওখানে লাইনে দাঁড়িয়ে অর্ডার দিতে হয়। বসে লক্ষ্য করছিলাম কিছুটা সময় লেগে যাবে ওই লাইন ছোট হতে। আজকে দিন কার কেমন কেটেছে এসব নিয়েই টুকটাক কথা চলছিলো। হারপ্রিতের আজকের মেনু – ফ্রেঞ্চ ভ্যানিলা উইথ এক্সপ্রেসো শট সাথে স্ট্রবেরি মাফিন। আর আমি নিলাম হট চকলেট। ও বলছিলো – বেশ ক্ষিদে পেয়েছে! কিন্তু পরে আর কিছু নিতে চাইলো না। দুজনে একসাথেই অর্ডার নিয়ে ফেরত এলাম।
খাওয়া শুরু করার আগেই বলে নিল আজকে শেয়ার করতে পারবে না ও। আমি কিছুটা হতবাক হয়ে তাকাতেই বলে, “নাও; আমি তো এমনিতেই মজা করছিলাম!”
ছোট বেলার কথা বলছিলো – এক রাতে তিন বোন মিলে হাঙ্গামা বাধিয়েছে। ফ্যানের বাতাসের কাছে কে শোবে এ নিয়ে চলছিল তর্ক। খাটের বামপাশের দিকে ফ্যানের হাওয়া সবসময় বেশি আর ওই জায়গা নিয়েই কাড়াকাড়ি। বেশ হট্টগোল করার এক পর্যায়ে ওর বাবা পাশের রুম থেকে বেরিয়ে এসে প্রথম থেকেই যাকে পেলেন তাকে বেশ কয়েকটি সজোরে চপেটাঘাত করে চলে গেলেন। যাওয়ার সময় ওর ছোট্ট বোন আমতাআমতা করে বললো, “পাপা, মোটি তো ইধার হ্যায়!!” ওর বাবা মারতে এসেছিলেন হারপ্রিতকেই কিন্তু অন্ধকার ঘরে যাচ্ছেতাই মারলেন আদরের বড় মেয়েকে কারণ ও বাবার উপস্থিতি টের পেয়ে আগে থেকেই বিছানা থেকে সটকে খাটের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। একে তো রাতের অন্ধকার! রুমের লাইট নেভানো। আর ওরা তিনবোন সবসময় শুতো পালাক্রমে প্রথমে হারপ্রিত, ছোট, এরপর বড় বোন। কাজেই ইন্জিনিয়ার সাহেবের অনুমান ঠিক থাকলেও এ যাত্রায় তার ভুল করার মাশুল দিতে হলো বড় মেয়েকে। বেচারী! মার খেয়ে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে লাগলো।
ফ্রেঞ্চ ভ্যানিলায় চুমুক দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে বলে, “মুখ থেকে হাত সরাও, দেখতে পাই না। কথা বলার সময় চোখাচোখি না হলে কথোপকথনের আগ্রহ চলে যায় আমার!”

আমি ওর কথায় কিছুটা অবাক হলেও তড়িৎকর্মা হলাম। বাইরে তাকিয়ে আমি দেখছিলাম বাইক রাইডাররা সবাই টিম হর্টনসের সামনে জটলা পাকিয়েছে। এরা মুলত একদল বাইক চালক যারা দল বেঁধে একসাথে ঘুরে বেরায় পুরো গ্রীস্মকালীন সময়টা জুড়ে। প্রথমবারের গ্রীস্মের ছুটিতে যখন ক্লাস শেষে (গ্রীস্মকালীন কোর্সের) ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরছিলাম তখন বাস থেকে এই বিশাল গ্রূপকে দেখি আর ভাবছিলাম এই গুন্ডাগুলোকে পুলিশ এরেস্ট করছে না কেন? পরে কানাডিয়ানদের সাথে গল্প করার সুবাধে জানলাম এরা সখের বশে ঘুরে বেরায় আর কোথাও এক জোট হয়ে আড্ডা দেয়। যেমন – সখের বাইসাইকেল চালকরা যেরকমভাবে আমাদের দেশের এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ঘুরে বেলায়।
ওদিকে গল্পের ঝাপি খুলে বসেছিল হারপ্রিত – স্কুটি চালিয়েই যেতো কলেজে। আরেকদিন নাকি এক ছোট্ট কুকুরের বাচ্চাকে মেরে দিয়েছিল। না, সেরকম কিছু হয়নি। ধাক্কাটা লেগেছিল বেশ সজোরেই কিন্তু দৈব বলে বেঁচে যাওয়া পাপিটি শুধু কাউ কাউ করতে করতে সরে গেলো। আর ও একরকম হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
ক্লাসের পরে প্র্যাকটিক্যাল নিয়ে পড়েছিলাম সমস্যায়। গণিতের মারপ্যাচ কখনোই মাথায় ঢুকলো না। ওকে বললাম দেখিয়ে দিতে। বিকাল পাঁচটা। যথাসময়ে এলো। হলদে রঙের সোয়েটারের সাথে ব্লু জিন্স। আজকে চুল খোলা রেখেছে। জিজ্ঞেস করায় জানালো, আধ ঘন্টা আগেই স্নান সেরেছে, তাই চুল পুরোপুরি শুকায়নি। ওকে না জানিয়েই ক্যান্টিনে গিয়ে নিয়ে আসলাম কফি – এটা অবশ্য নরমাল কফি – দুধ আর চিনি দিয়ে। কে জানে পছন্দ হবে কি না ? লাইব্রেরীতে বসে আছি। আর প্র্যাকটিক্যালের টুকটাক অংক দেখিয়ে দিচ্ছে। পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে কফিতে চুমুক দিচ্ছে। ওর মোটা মোটা ঠোঁট একবার ভিজছে আর কফির কাপে ওর লিপস্টিক এর দাগ রেখে যাচ্ছে। পুরোটা শেষ করে আমায় বলে,”আমার রেড লিপস্টিক আছে না পুরোটাই গেছে?” পড়ার পাট চুকিয়ে গেলে বললাম, “চলো, বাজার করতে হবে। ওয়ালমার্ট যাই।” হারপ্রিত বললো, ওরও কেনাকাটা আছে। ইউনিভার্সিটি থেকেই বাসে চেপে পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে।
এত বিশাল ওয়ালমার্টে জিনিসপত্র খুঁজে পাওয়াটাই তো একটা ধাঁধা। সঙ্গে কেউ থাকলে সময়টা কেটে যায় বেশ। শপিং শেষে বাইরে এসে হিম শীতে জমে যেতে লাগলাম। বাসের তো দেখা নেই! ও বললো হেঁটেই যাওয়া যাক! ঠিক করলাম হেঁটেই যাবো। কিন্তু মাঝপথে এসে বলতে লাগলো আর হাঁটতে পারবে না। দেখলাম আসলেই দুধের অতবড় ক্যান নিয়ে কষ্টই হচ্ছে ব্যাচারীর। ট্যাক্সি কল করলাম। সাত মিনিটের ব্যবধানে হাজির ড্রাইভার। হারপ্রিত দূর থেকেই এক পলক দেখেই বলে দিলো – “আরে, এটা তো অমর!!” আমি আর অমর একসাথেই জয়েন করি ওয়ালমার্টে। ওর ব্যবহার বরাবরই খটমটে আর আজকে আমাকে দেখলো এক মেয়ের সাথে। রাগ গেল আরও বেড়ে কিন্তু ভদ্রতার গ্যাঁড়াকলে পড়ে বেচারা কিছুই করা তো দূরে থাক আমাদের দুজনকেই সসম্মানে বাসায় পৌঁছে দিল।
নর্থ সিডনি যাওয়ার পথে একটা লেক পড়ে – পোটল লেক। ওইদিন রৌদ্রস্নাত দিন ছিল না মোটেই আর আকাশের মেঘের সাথে দূরের পোটল লেকের দিগন্তের রেখা লিন হয়ে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। এসব আমার দৃষ্টিগোচর না হলেও হারপ্রিতের কৌতুহলী চোখ ঠিকই খুঁজে নিল। দূরের বাড়িগুলোকে ছবির মতো মনে হয়। অধিকাংশ বাড়ির সামনে চেয়ার সাজানো রয়েছে। আরাম কেদারায় বসে বাইরে লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে কফির গ্লাসে একটা হালকা চুমুক দেওয়ার অভিজ্ঞতাকে এক বাক্যে বলে বোঝানো যাবে না। অনেক বাড়ির সামনে পোশা কুকুর খেলছে আপন মনে। দূরের মুনরো পার্কে ছেলেমেয়েরা ফুটবল খেলায় মেতে উঠেছে। যেন লাইভ ম্যাচ চলছে! তার পাশে সারিবদ্ধভাবে নোঙর করা জেলেদের জাহাজ। কোনোটা নীল, কোনোটা কমলা, বা হলুদ, আবার কোনোটা সবুজ রঙের। হরেক রকমের রঙের পশরা সাজানো রয়েছে।
আমরা বেশ খোশগল্পে মজে ছিলাম। ও বললো পারলে একটা ছবি তুলে দাও। আমি তেমন কোন আগ্রহ না দেখালেও ও বারবার বলতে লাগলো “কিতনা সুন্দর হ্যায়”!! তারপর জায়গা ছেড়ে একটু উঠতেই বলে, “রেহনে দোও”। (লাগবে না)
যাওয়ার পথে যে রাস্তাটা পড়ে সেটা একদম লেকের কোল ঘেঁষে। যদি একটু এদিক ওদিক হয় তাহলে সোজা সাগরে সলিল সমাধি! হ্যাপির সাগরের দিকে তাকিয়ে বলে ওই খাদের কিনারা ওর মনের কোণে লুকিয়ে থাকা অজানা ভয়কে ইশারায় ডাকে। ওর কেমন জানি ভয় ভয় করে! আমি ওকে এই বলে আশ্বস্ত করলাম বাসে থাকতে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। বরং বাসের সাথে ধাক্কা লেগে অন্য যে কোন গাড়ি অতই সাগরে হারিয়ে যেতেই পারে! আমাদের কিচ্ছু হবে না!!
সুমন এপ্লাই করেছে পাসপোর্ট রিনিউয়ের। আমরা একসাথেই থাকি। তাই যেতে হবে পোস্ট অফিসে। কাগজপত্র জমা দেবো। দু’জনেই গাড়িতে চেপে ডাউনটাউন সিডনির পথে রওয়ানা হয়েছি। মাঝে হারপ্রিতের কল, ফোন রিসিভ করে শুনলাম একদম শুদ্ধ বাংলায় জিজ্ঞেসা করে- “কোথায় আছো তুমি?”
বললাম – আমি তো ডাউনটাউন যাই। কেন? কি হয়েছে?
হারপ্রিত – না, এমনি! সিফট আছে??
আমি – না, আজ তো নেই। তোমার?
হ – না, নেই! কি করছো?
আ – সুমনের একটা দরকারে এসেছি। ওর কানাডা পোস্টে কাজ আছে।
হ – মুঝে সামাঝ নেহি আ রাহি হ্যায়!! ( আমি বুঝতে পারছি না)
বুঝলাম ওর বাংলা ভাষার স্বল্প ভান্ডার শেষ হয়েছে!
আ- ওকে! সুমন কা কাম হ্যায়, ইসলিয়ে কানাডা পোস্ট মে আয়ে হ্যায়।
হ- সাম কো ফ্রী হো?
আ- হম… ক্যায়া হো গ্যায়া??
হ – কফি পে চ্যালে?
আ – ওকে! চলতে হ্যায়।
পড়ুন পরবর্তী পর্ব: কফি বালিকা (পর্ব-০২)
তথ্যসূত্র: গল্পেসল্পে কিছুক্ষণ। লেখক: অতনু দাশ গুপ্ত। ঢাকা, সাফল্য প্রকাশনী, ২০২২।
Pingback: কফি বালিকা (পর্ব-০২) – সাফল্য প্রকাশনী